জগন্নাথপুর হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স এর অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

জগন্নাথপুর হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স এর অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
হুমায়ূন কবীর ফরীদি, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) স্টাফ রিপোর্টারঃ
জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার ও নার্স এর অবহেলায় হামিদ (৫০) নামক এক ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ডাক্তার রাজীব পালকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে জানাযায়, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলাধী ১৩ নং ভাতগাঁও ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত ভাতগাঁও গ্রাম নিবাসী শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত মোঃ আব্দুল হামিদ (৫০) বিগত ৩ রা সেপ্টেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ৪ ঠা অক্টোবর দিবাগত সন্ধ্যা রাত থেকে তাহার শ্বাসকষ্ট অতিমাত্রায় বাড়লে সঙ্গে থাকা স্ত্রী মাজেদা তৎসময় থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত নার্স তাহমিনা বেগম এর সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করে সহযোগিতা চাইলে নার্স তাহমিনা বেগম তাকে বলেন চিকিৎসক নির্দিষ্ট সময়ে এসে রোগী দেখবেন। চিকিৎসক ও নার্সের অবহেলায় বিনা চিকিৎসায় রাত ১২ ঘটিকার সময় আব্দুল হামিদ মৃত্যু বরন করেন। এসময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং  নার্স  চিকিৎসক এর অবহেলায় রোগী  আব্দুল হামিদ (৫০) এর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
পরে স্বজনেরা দুর্ঘটনার সময়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা কর্তব্যরত চিকিৎসক তানজিম হোসেন ও নার্স তাহমিনা বেগম এর অবহেলায় আব্দুল হামিদ (৫০) মৃত্যু করেছেন এমন অভিযোগ এনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী মাজেদা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার রোগাক্রান্ত স্বামীকে নিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। ডাক্তার আর নার্স এর অবহেলায় চিকিৎসাজনিত কারনে আমার স্বামীর মারা গেছেন। আমি এর বিচার চাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ৪তারিখ সন্ধা থেকে আমার স্বামীর শ্বাসকষ্ট  বাড়তে থাকলে চিকিৎসক না পেয়ে নার্স এর সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় ৩/৪ঘন্টার মধ্যে ডাক্তার কিংবা নার্স একটিবার আমার রোগীকে দেখতে আসেনি। মারা যাওয়ার পর ওরা এসেছে। আমরা থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ডাক্তার মধু বাবু এসে আমাকে শান্তনা দিয়ে বলেছেন তিনি বিষয়টি দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। দেখি কি হয়, প্রয়োজনে আমি আদালতের শরণাপন্ন হব।
এব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক রোগী তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, সন্ধ্যা রাত থেকে আব্দুল হামিদ এর শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলে উনার স্ত্রী বারবার নার্স এর শরণাপন্ন হন। কিন্ত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডাক্তার কিংবা নার্স এই রোগীকে দেখতে আসেনি। ওর মৃত্যুর পর অনেক ডাক্তার আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্স এর অবহেলায় আব্দুল হামিদ এর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা পেলে হয়তো তিনি বেচে থাকতেন। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার বিচার হওয়া দরকার। যাতে করে ডাক্তার ও নার্সরা কর্তব্যে অবহেলা করতে সাহস না পায়।
এবিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মধু সুত্র ধর বলেন, নিহত ব্যাক্তির স্বজনদের অভিযোগ এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ই সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অর্থোডক্সি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ রাজীব পালকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আহম্মদ হোসেন বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগী মৃত্যু বরন করেছেন জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা  দেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে কেউ দায়ী থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন